বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক :দায়িত্বহীনতা আর গাফিলতির কারণে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলাবাসীর যোগাযোগের প্রধান অবলম্বন জগন্নাথপুর- বিশ্বনাথ সিলেট সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজ না হওয়ায় যানবাহন চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। বারবার সড়ক সংস্কারের দাবীতে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা ধর্মঘট করলেও কাজ হয়নি। মঙ্গলবার সকাল ৭ টা থেকে ৬ষ্ট বারের মতো এই সড়ক সংস্কারের দাবীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।ফলে আজ থেকে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দির্ঘ দিন ধরে কাজ না হওয়ায় বড় বড় গর্ত হয়ে সড়কটি মরনফাদেঁ পরিনত হয়েছে। প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা। ইতিমধ্যে সড়কের গর্তে পড়ে ৩টি ডেলিভারীর ঘটনা ঘটেছে। দির্ঘ দিন ধরে অত্র এলাকার মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কর্তপক্ষের উদাসীনতা এলাকাবাসীকে বিক্ষুব্দ করে তুলছে।
জানাযায়, সিলেট বিভাগীয় শহরসহ ঢাকার রাজধানীর সঙ্গে জগন্নাথপুর ও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কয়েকলাখ মানুষ জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ-রশিদপুর- সিলেট সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে এই সড়কে বেহালদশা বিরাজ করছে।
২০১৭ সালে জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ সড়কের জগন্নাথপুরের ১৩ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের জন্য প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ কাজটি পান সুনামগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ । ওই প্রতিষ্ঠান কিছু কাজ করে বন্ধ করে দেয়। এরপর স্থানীয় এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নামমাত্র কাজ করে অর্থ লুট করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কাজের তিন মাসের মাথায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। দীর্ঘকাল থেকে এ সড়কে কাজের নামে সরকারি অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালে ১০ লাখ টাকার জরুরী সংস্কার করা হয়। এর কিছুদিন পর ২০১৯ সালে সড়কের বেহাল দশা দেখা দিলে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সড়কে অস্থায়ী মেরামতের জন্য ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। কাজ পায় সুনামগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রেনু এন্টারপ্রাইজ।নামমাত্র মেরামত করে অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে জগন্নাথপুর অংশের ১৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ২৫ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করা হলে কাজটি পায় মাদারীপুরেরর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হামীম সালেহ (জেভি)। চুক্তি অনুয়ায়ী গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখ থেকে সড়কে কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মার্চের প্রথম দিকে সড়কে কিছু মাটি খুড়তে দেখা যায়। চুক্তি মোতাবেক আগামী বছরের ৩১ মার্চ কাজ শেষ করার কথা। এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভার দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। সম্প্রতিকালে ঝড়-বৃষ্টির সময় সামান্য কাজ করে ফের বন্ধ হয়ে যায় কাজ। ফলে অব্যাহত বৃষ্টি আর বন্যায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে অচল হয়ে পড়ে সড়কটি। সম্প্রতি এ সড়কের জগন্নাথপুর পৌরএলাকার বটেরতল নামক স্থানে একটি গর্তে পড়ে অটোরিকশায় থাকা সন্তানসম্ভাবনা এক নারী সড়কেই সন্তান প্রসব করেছেন।এর আগে সড়কের ছিক্কা এলাকায় গর্তে পড়ে উপজেলার ছিলাউড়া গ্রামের এক নারীর সন্তান ভূমিষ্ট হয় এবং হাসপাতালের সামনের সড়কে আরেক নারীর সন্তান ভূমিষ্ট হয়। এ সব ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সংস্কারের অভাবে সড়কটি বেহাল অবস্থা বিরাজমান। এমতাবস্থায় সংস্কারের দাবীতে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ৬ষ্ট বারের মতো ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। অপরদিকে জগন্নাথপুর-সিলেট সড়কের সংস্কারের দাবীতে ‘‘ আমরা জগন্নাথপুরবাসী, জন্মস্থান-কে ভালোবাসি” এ শ্লোগানকে সামনে রেখে যুক্তরাজ্যের সুটন শহরে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে বসবাসরত জগন্নাথপুরের সচেতন নাগরিকদের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত হবে। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ ব্যপারে ব্যাপক প্রচারনা চলছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিজামুল করিম জানান, জনগুরুত্বপূর্ন এই সড়কটি সংস্কারের অভাবে যানচলাচলে অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। সংস্কারের দাবীতে আমরা একাধিকবার পরিবহন ধর্মঘট কর্মসুচী গ্রহণ করেছি। সংস্কারের আশ্বাসে কর্মসুচী বাববার প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমানে সড়কে বেহাল দশা বিরাজ করছে। বড় বড় গর্তের ফলে যানবাহন চালানো ঝুকিঁপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে আমরা কর্মসুচী দিয়েছি। গত ৩ মাস ধরে সড়কের কাজ বন্ধ রয়েছে। আমাদের কর্মসুচীর একদিন আগে হঠাৎ করে সোমবার দুই তিনজন শ্রমিক দিয়ে সড়কের একাংশে কাজের নামে নাটক করা হচ্ছে। আজ থেকে ধর্মঘট চলবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার সাকলাইন হোসেন জানান, করোনা ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে সংস্কার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত মেহেদী হাসানের সাথে আলাপ হলে তিনি জানান, পরিবহন মালিক শ্রমিক দের সাথে আমরা বৈঠক করে বলেছি দ্রুত সড়কের নির্মান কাজ শুরু হবে। সোমবার থেকে কাজ শুরু করে দিয়েছি। তার পরেও তারা কেন ধর্মঘট করছেন বুঝতে পারছিনা।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার বলেন, এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক আইডিএ এর অর্থায়নে জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ সড়কের ১৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ২৫ কোটি ৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। করোনা মহামারী,বন্যা,ভারতের এলসি বন্ধ থাকায় ভালো মানের পাথর পাওয়া যাচ্ছে না। এ সমস্ত কারনে কাজে বিঘ্ন ঘটছে। এবার যাতে সড়কের কাজ মান সম্মত ও টেকসই হয় এ ব্যাপারে সচেতনভাবে আমরা কাজ করছি।
Leave a Reply